এক মুঠো পবিত্রতা"
:- কেউ আছেন?
:- কে ? আমি ঘরে আছি। আয়।
শ্রীকান্ত হালকা ধাক্কা দিতেই দরজাটা ক্যাঁচ করে শব্দে খুলে যায়। ঘরে ঢুকতেই মদ, উগ্র সুগন্ধি আর গুমোট ভাবের মিশ্রিত একটা গন্ধ শ্রীকান্তের নাকে ধাক্কা দেয়। একটা ছোটো স্যাঁতস্যাঁতে ঘর,ঘরের এক কোণে একটা তক্তোপোশ, তার ওপর ছেঁড়া তেলচিটে একটা মাদুরের ওপর বছর পঁয়ত্রিশের এক মহিলা উল্টো দিকে ঘুরে বসে আছে।
:- আমি। আসলে…
:- বাবু। আমি খালি আছি। এই স্মাইলি তোমাকে সেরা মজা দেবে । পুরো পয়সা উসুল মজা দেবো বাবু। তবে রেট ফিক্সড ঘন্টায় হাজার টাকা তবে তোমার জন্য ইস্পেশাল ছাড় সাড়ে সাতশো ফাইনাল। মদ আনতে বলবো নাকি ? দেশী বিদেশী সব পাবে। তার জন্য আলাদা রোখড়া।
:- আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।
:- এই বেশ্যাকে আবার আপনি। কে গো তুমি?
এই বলে স্মাইলি ঘুরে তাকায়। চুলটা পাট করে আঁচড়ানো পাঞ্জাবি পরা এক বছর পঁচিশের ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে চোখে বিরক্তি আর কৌতুহলী ভাব।
:- তুমি তো ভদ্রঘরের ছেলে। এলাকায় আজ প্রথম ?
:- হুমম।
:- আমায় পছন্দ হলো না বুঝি। কচি মাল চাই? বলো তোমার বাজেট কতো?
:- না দিদি। আমি ওই জন্য আসিনি।
:- কি চাই পরিস্কার করে বলো দেখি।
:- আমি প্রতিমা তৈরির জন্য আপনার দালানের মাটি নিতে এসেছি।
:- অঅঅ....পুজো আসছে। এই সময় তো আমাদের দুয়ারে অনেক ভদ্রলোকের পা পড়ে। যারা আমাদেরকে পাপী বলে মনে করে। তারাও আমাদের হাত থেকে মাটি নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। সেই সময় নিজেকে খুব মস্ত মানুষ মনে হয়।
:- আপনাদের দালানের মাটি দিয়েই তো মায়ের প্রতিমা গড়া হয়।
স্মাইলি ছেলেটির দিকে তাকিয়েই থাকে। এই গুমোট পরিবেশে ওর অস্বস্তি হলেও ছেলেটার চোখে স্মাইলির জন্য সম্মান রয়েছে, যা স্মাইলি অন্য কারো চোখে দেখেনি।
স্মাইলি একটু হেসে উঠে যায়। শ্রীকান্ত ঘরটার চারিদিকে চোখ বুলায়। এক দেওয়ালে মা দূর্গার খুব সুন্দর এক ছবি টাঙানো। স্মাইলি একটু পরেই আঁচল ভরে মাটি নিয়ে আসে।
:- ব্যাগ দাও বাবু। মাটি ভরে দিই।
:- দিদি। তোমাদের ঘরের মাটি দিয়েই কেন মায়ের মূর্তি গড়ানো হয়? জানো?
দেওয়ালে টাঙানো দুর্গা ঠাকুরের ছবিটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে শ্রীকান্ত। নিজের অজান্তে তুমি বলে ডেকে ওঠে।
:- না না। বছরের পর বছর ভদ্র বাবুরা এসে নিয়ে যায় তাই দেখেছি। অনেকে এই নিয়ে বিস্তর লেখালেখিও করে।
:- তোমাদের একেবারে নিঃশেষ করে দেওয়ার পরে তোমরা শীতের শেষে কচি পাতার মতো এই বাড়িতে থেকে নিজেদেরকে আবার নতুন করে সাজিয়ে তোলো। মা মহামায়া যেমন অসীম তেমন এই মাটির প্রবিত্রতাও অসীম। তাই এই মাটি দিয়েই মা সেজে ওঠে।
:- সত্যি, এই মাটি এতো মূল্যবান ? তাহলে যে আমাদেরকে সবাই অচ্ছূৎ বলে।
:- সেটা তাদের অজ্ঞতা। আচ্ছা আসি দিদি। পরে আবার দেখা হবে।
স্যাঁতস্যাঁতে ঘরটায় সম্মান রেখে এক মুঠো পবিত্রতা নিয়ে শ্রীকান্ত চলে যায়।
---------- সমাপ্ত -----------
কলমে - অনন্যা মণ্ডল

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন