ফ্রি খাবার পাও তো তাই বোঝো না মাছ তরকারির কত টাকা দাম!
নিজের মা বাবার কাছে কিছু আবদার করলে এমন কথা শুনতে হবে এমন ভাবনা কখনো আমার মস্তিষ্কের ভিতর উদয় হয়নি। সত্যি কখনো ভাবতে পারিনি মা বাবা রোজ খাওয়ার খোঁটা দিতে পারে। তারা আমার আপন মা বাবা। এমনও নয় আমি তাদের সৎ ছেলে বা আমাকে কুড়িয়ে পেয়েছে।
দুমিনিট আগের কথা,
অনেক উৎসাহ আর খুশি হয়ে মা বাবার কাছে নিজের ক্রিকেট খেলার জন্য ঢাকা ক্লাবে চান্স পাওয়ার কথা জানালো বাদশা। কাঙ্ক্ষিত কোথাও চান্স পেলে কে না খুশি হয়। বাদশার ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেট খেলার খুব নেশা। মায়ের কাছে রোজ এই খেলা নিয়ে সে মার খায় তবুও ক্রিকেট যেন তার খেলতেই হবে! কি করে এতো মার সহ্য করে আর কেনই বা ক্রিকেট খেলে কে জানে! তবুও তার ক্রিকেট খেলা চাই। নিজের মতো করে পাড়ার বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলতে খেলতে একদিন সে ঢাকার এক নাম করা ক্লাবে চান্স পায়। ছয়মাস সেখানে থেকে খেলতে হবে তারপর বাছাই করে জাতীয় দলের প্লেয়ার নেওয়া হবে। কপাল ভালো হলে হয়তো জাতীয় দলের প্লেয়ার হয়ে যাবে বাদশা।তার খুশি আর ধরে না। খুশিতে লাফাতে লাফাতে বাড়ি এসে মা বাবাকে বলে,
বাদশাঃ- জানো আমি ঢাকার একটা ক্লাবে চান্স পেয়েছি। ছয়মাস ঢাকায় থাকতে হবে আর ওখানে থেকে নিয়মিতভাবে প্রাকটিস করতে হবে, এরপর আমি ভালো খেললে চান্স পেয়ে যাবো।
বাদশার এমন কথায় তার মা বাবার যে এই উত্তর হবে কিছুতেই ভাবতে পারেনি সে। বুকের ভিতর কেউ হয়তো পাথর গড়িয়ে বুকটাকে চাপা দিয়ে দিয়েছে কিন্তু চোখ কেন আজ অশ্রু শূন্য। নয়নের কি আজ বারিধারা নেই তাহলে? ২০ বছরের ছেলেটা আজ কেন কোনো উত্তর খুঁজে পায় না? মন খারাপ আর একবুক হতাশা নিয়ে নিজের রুমের ভিতর নিজেকে আবদ্ধ করে নিলো সে। কিন্তু চার দেওয়ালের আবদ্ধ ঘরের ভিতর কারো ছোট্ট বেলা থেকে মনের ভিতর আস্তে আস্তে লালিত পালিত স্বপ্ন ভাঙার আর্তনাদ কি আটকা পড়ে যাবে? তা কি আর কখনো ঘরের বাইয়ে আসতে পারবে না? আজ তার সকল প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই সব যেন উত্তর ছাড়া প্রশ্ন আজ তার কাছে ধরা দিয়েছে। আচ্ছা ভালো করে কি বলা যেতো না কথাটা। হয়তো না। ভালো করে বোঝাতে গেলে হয়তো বায়না করে বসতো সে! ছেলের বায়না কি মা বাবা ফেলতে পারে? কেন আজ আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর আমার জানা নেই। কেন? কেন?
কিছু সময় সার্থপর আঁখি শুষ্ক ছিলো কিন্তু হঠাৎই তা বারিধারা বহন করতে লাগলো। চোখের ভিতর কি এতো পানি থাকে যাতে একটা শিমুল তুলার বালিশ ভিজে চুপসে যেতো পারে? কেন পারবে না! আজ তো বালিশটাও ভিজে গেলো। তবুও ভিজে বালিশে কখন চোখ লেগে এলো বুঝতে পারলাম না। চোখের পাতা এক হয়ে অশ্রু সিক্ত বালিশে শরীরটা এলিয়ে দিলাম। ঘুম ভাংলো মায়ের ডাকে! কখন যে রাত হয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না। মা বেশ রাগী গলায় কিছু বলছেন মনে হয়। কিন্তু তা আমাকে কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে না। কারণ আমি এখনো আমার স্বপ্ন ভাঙায় আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। বড় কষ্টের আওয়াজ এটা। যারা শুনছে তারাই বুঝতে পারে কতটা যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে এই আওয়াজ। কিছু সময় পর মায়ের স্বর আমার কানের শ্রবণ শক্তির ভিতরে পড়লো, শুনতে পেলাম মা বলছে,
মাঃ- সারাদিন বাইরে টইটই করে ঘুরবে আর রাতে এসে মরার মতো পড়ে থাকবে, অতো গাদা গাদা বই কেন কেনার দরকার হয়? নিজের তো আর কামাই করতে হয় না। তাও যদি বই খাতার কাছে যায়। বাড়ির কোনো কাজের ধারেও তার দেখা নেই। খালি তিনবেলা সময় হলেই খেতে চলে আসে।
আমি রোজ মায়ের কথায় বিরক্ত হলেও আজ তেমন কোনো অনুভূতি হলো না। উঠে গিয়ে হাত মুখ ধূয়ে আসলাম। তারপর পড়ার টেবিলে বসে বইয়ের পাতাগুলো অশ্রু সিক্ত করতে লাগলাম। রাত বাড়ার সাথে সাথে আমার ক্ষুধাও বাড়তে থাকে কিন্তু আজ কোনো কিছু বুঝতে পারছি না। এখন কি করলে কষ্ট লাঘব হবে কে জানে! কিছুতেই কিছু মাথায় আসছে না। মাথাটাও বড্ড ধরে আছে। কেউ কি আজ আমার পাশে নেই! কি এমন হতো যদি কেউ এখন আমার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতো। শূন্যতা আমাকে ঘিরে ধরেছে। গায়ের ভিতর-টা কেমন জানি লাগছে। রাগে দুঃখে কষ্টে আমি পাথর হয়ে গেছি। উঠে গিয়ে গোসল করে আসলাম। যদি কিছুটা ভালো লাগে কিন্তু বুকের ভিতরের কষ্ট কি বাইরের শান্তিতে নিবারণ হয়! টেবিলের পাশে রাখা কুরআন শরীফের দিকে চোখ গেলো। মনে হলো এখন যদি নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে একটু শান্তি চাই তাহলে কি পাবো না? কেন পাবো না আল্লাহ নিজে বলেছেন
--" নিশ্চয়ই কষ্টের সাথে রয়েছে স্বস্তি! ( সূরা ইনশিরাহ, আয়াতঃ ৬)
পুকুর ঘাট থেকে ওজু করে নিজের ঘরে জায়নামাজ বিছিয়ে নিলো বাদশা। তারপর নামাজ পড়ে মনের কষ্ট কিছুটা হালকা করার চেষ্টা করতে লাগলো। কিছু সময় পর তার আগের মতো এতো অসহ্য কষ্ট হচ্ছে না। কিছুটা ভালো লাগছে। সত্যি আল্লাহ মহান। পরম দয়ালু! তার রহমতের কোনো শেষ নেই।
কিছু সময় পরে মা রাতের খাবার খেতে ডাকলো। কিন্তু আজ আর কোনো খাবার গলা দিয়ে নামবে না। তাই কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলাম। তবুও মা রাগী সুরে বলতে লাগলো
মাঃ- রোজ রোজ এক একক বাহানা করে আর না দিতে পারলে না খেয়ে থাকে! কয়দিন না খেয়ে থাকতে পারবে সেই তো গেলা লাগবেই লাগবে। কোথায় আর যাবে। এমন ঢং কত দেখলাম। মরেও তো না।
মায়ের কথায় মনে হচ্ছে মরে যাই। এখন হয়তো মরে গেলেই আমার শান্তি হবে। আমি আর এই কষ্ট নিতে পারছি না। নিজের আপন মা হয়ে কি করে এইসব বলতে পারে আমি জানি না। বালিশে মুখ গুঁজে বসে রইলাম। তারপর কখন জানি ঘুমিয়ে গেলাম। সকলে মায়ের চিৎকারে ঘুম ভাংলো। এটা নতুন কিছু নয়। বেলা করে ঘুমালে সকল মা বাবাই রাগ করে। তাছাড়া ফজরের নামাজ তো আছে, কিন্তু আজ আর আমি উঠতে পারিনি। কত রাতে ঘুমিয়েছিলাম মনে নেই। চোখের পানি বিসর্জন দিতে দিতে ঘুমিয়েছিলাম বলে মাথাটাও প্রচুর ব্যাথা করছে, তাছাড়া এখন ক্ষুধাও লেগেছে। মাকে কি কিছু খাবার দিতে বললো, জানি না এখন কি শুনতে হয়! তবুও খুব ক্ষুধা লাগছে তাই মা'কে বললাম,
বাদশাঃ- মা কিছু খেতে দেও না ক্ষুধা লাগছে!
মা বেশ রাগী গলায় উত্তর দিলো,
মাঃ- তোর জন্য আমি এখন খাবার নিয়ে বসে থাকি আর কি! সারাদিন খাওয়া আর ঘুম ছাড়া কোনো কাজই তো তোর নেই। এতো খাইখাই আসে কোথা থেকে তাও যদি কিছু কামাই কাজ করতি বুঝতাম। শুয়ে বসে কার যে এতো খিদে (ক্ষুধা) লাগে কে জানে!
খাওয়ায় ইচ্ছেটা নিমেষেই উধাও হয়ে গেলো। পেটের ভিতর ক্ষুধা নামক জলন্ত কাঠগুলো নিমেষেই পানিতে চুবিয়ে দিলো কেউ৷ বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলাম। কি করবো এখন কিছু বুঝতে পারছি না। রাস্তায় এক বন্ধুর সাথে দেখা হলো, সে হাসি মুখে বললো,
বন্ধুঃ- কি রে বাদশা তুই নাকি ঢাকার ক্লাবে চান্স পেয়েছিস? জাতীয় দলে খেললে কিন্তু আবার আমাদের ভুলে যাস না।
কথাগুলো বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো। কিন্তু আমার বুকের মাঝে নিবুনিবু কষ্টটা আবারও যেন দ্বিগুন হারে বেড়ে গেলো। রাস্তার পাশে একটা দোকানে বসে পড়লাম। পকেটে টাকাও নেই যে কিছু কিনে খাবো। দোকান থেকে দুই গ্লাস পানি খেয়ে নিলাম। তবুও ক্ষুধা কমছে না। কাল দুপুরের আগে খেয়ে খেলতে গেছিলাম তারপর দিয়ে আর কিছু খাওয়া হয়নি। তারপর এতো কিছু সহ্য করে এখন আর শরীরটা পারছে না। কিন্তু বাড়িতে আমি আর খাবো না। অনেক ভেবে এক বন্ধুর কাছে গেলাম। ওট নাম সজীব। তার কাছে কিছু টাকা ধার চাইলাম। সে আমাকে কিছু টাকা দিলো। আর বললো বাড়ি রাগ করেছি তা নাকি ভালো করেছি, ওর কথাগুলো ছিলো এমন,
সজীবঃ- আরে ভালো কাজ করেছিস, দুই একদিন রাগ করে থাকলে দেখবি ঠিক রাজি হয়ে যাবে। আরো কিছু লাগলে বলিস, আর সময় করে মিটিয়ে দিস। বিকালে এক জায়গাতে যাবো গেলে আসিস।
ওকে হাসি মুখে বিদায় জানিয়ে একটা দোকানে গিয়ে চপ আর বেগুনি কিনে খেলাম। প্রায় একদিন না খাওয়ার পর বাইরের এসব খাওয়ার সাথে সাথে আমার খুব বমি আসলো। একটা জায়গা দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। পেটের ভিতরের সব কিছু মনে হয় বের হয়ে আসবে। খুব খারাপ লাগছে। অনেক কষ্টে সেখান থেকে উঠে একটা পুকুরের কাছে গেলাম। মাথায় চোখ মুখে পানি দিয়ে বসে পড়লাম। সন্ধ্যা হওয়ার পর আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। বাড়িতে এসে চোখে পড়লো আব্বা কাজ শেষ করে বাড়িতে আসছে। বরাবর আমি আব্বাকে ভিষণ ভয় পাই। তাই চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে বইয়ের পাতা উল্টাতে লাগলাম। কি যন্ত্রনা! চোখ দিয়ে কেন আবার পানি পড়ছে। দূর কিছু ভালো লাগে না। সারাদিন না খেয়ে বাইরের থাকার পরও কেউ আমাকে একবার ডাকতে আসলো না। মায়ের তীক্ষ্ণ বিলাপ অবশ্য কাণে এলো, মা খুব সুর করে বলছে,,
মাঃ- মানুষের ছেলে মেয়ে মানুষের কত খেয়াল রাখে আর আমারে আল্লাহ দিছে কতগুলো। কোনো কাজের ধারে কাছে আসবে না। সারাদিন শুধু খাওয়া আর ঘুম আর ঘুরে বেড়ানো। সব মরলে আমি গোসল করে উঠতাম।
সারাদিন না খেয়ে ছিলাম তবুও মায়ের কোনো খোঁজ নেওয়ার দরকার পড়লো না অথচ ঠিকই মরার কথা বলছে, আচ্ছা আমি এখন মরে গেলে কেমন হয়! এমনিও তো আগে পরে কিছু নেই আমার, মায়ের আরো দুইটা ছেলে-মেয়ে আছে। আমি না থাকলেই বা তার কি! সবসময় তো আমার মরার কথা বলতে থাকে। আমি মরলে হয়তো ওদের কিছুই হবে না। চির তরে মুক্তি পেয়ে যাবে সকলে! এমন সময় আমার হাতের ফোনটা বেজে উঠলো,
ক্লাব থেকে ফোন করেছে, কি জানি কি বলবে, ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলাম। ওপাশ থেকে শুনতে পেলাম স্যার বলছে,
স্যারঃ- বাদশা তুমি কি কাল থেকে ঢাকায় খেলতে পারবে? না আমি আসলে বলতে চাইছি কিছুদিন খুলনা প্রাকটিস করবো আমরা তারপর ঢাকায় যাবো। তুমি চিন্তা করো না তুমি ঢাকা থাকলে আমি ওখানের কর্মচারীদের বলে দিচ্ছি তুমি ওদের সাথেই প্রাকটিস করতে থাকো। তুমি দারুণ বল করতে পারো। একটু মনোযোগ দিয়ে খেললে জাতীয় দলের প্লেয়ার হিসাবে তুমি সিলেক্ট হয়ে যাবে। কি হলো কথা বলছো না কেন? তোমার মা বাবাকে ব্যাপারটা খুলে বলেছো তো?
স্যারকে কি উত্তর দিবো আমি জানিন না। এখন স্যারকে না বলে দিলে তারা অন্য কেউকে সিলেক্ট করে নিবে আর আমি বাদ পড়ে যাবো। কি বলবো এখন? আমি কোনো উত্তর দিচ্ছিলাম না। কিছু সময় পর স্যার ফোন কেটে দিলো। ফাইনাল ভাবে সকলের থেকে জেনে নিতেই কল দিবে বলেছিলো। এখন হয়তো আমাকে বাদ দিয়ে দিবে, নিজের মুখে নিজের স্বপ্ন ভাঙার কথা স্যারকে বলতে পারলাম না। গলায় কথা আটকে আসছিলো। পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম কিছু পানি জমে আছে। পানির উৎস আমার আঁখি জোড়া৷। কপল বেয়ে উষ্ণ বারি মাটিতে পড়ে আছে তবুও আমার হুশ নেই। কি করবো এই জীবন রেখে?
যেখানে মা বাবা ভাই বোন সকলের কাছ থেকে খাওয়ার খোঁটা শুনতে হয়। নিজের মা-ও রোজ মরতে বলে, আমি মরলে হয়তো ওদের আর কোনো কষ্ট হবে না। আর কেউ কি কান্না করবে আমার জন্য, আমার বোনটা আমাকে অনেক ভালোবাসে । আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি এই পৃথিবীতে আমি আর থাকবো না। মরার আগে বোনটা কেমন আছে একবার জেনে নিই। আর কখনো তো জানতে পারবো না। মুঠোফোনে বোনের নম্বরটা বের করে নিলাম। ওর অবশ্য বিয়ে হয়ে গেছে। ওপাশ থেকে কিছু সময় কথা হলো। শেষবার কথা বলছি ভাবতেই চোখের পানি থামছে না। এই একটা মানুষ কখনো আমাকে কথা শোনায়নি। সবসময় আগলে রেখেছে, বারবার গলা আটকে আসছিলো, ওর সাথে বলা কথাগুলো সারাজীবন মনে রাখতে মন চায় কিন্তু মরার পর কি আর কারো কথা মনে পড়ে নাকি, আমার বোনের নাম মনি, ওর কথাগুলো আমার কানে বাজতে লাগলো,
তখন কল করার পর,
মনিঃ- ছোট কেমন আছিস? খেয়েছিস সারাদিন?
আমাকে আমার বোন ছোট বলে ডাকে আমি ওকে আপা বলি, বয়সে আমার থেকে বড় তাই, ওর কথা শুনলে আমার খুব ভলো লাগে, আমি রাগ করলে ও আমার পছন্দের খাবার রান্না করে নিশে আসতো আমার রাগ ভাঙাতে আর হয়তো আসতে হবে না! আমি কান্না জড়িত কন্ঠে বললাম,
বাদশাঃ- আমি ভালো আছি আপা, তুই ভালো থাকিস।
আপা হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি কান্না করছি, তাই ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলো,
আপা মনিঃ- কি রে ছোট তুই কি কান্না করিস?
আমি আটকে আসা গলায় বললাম,
বাদশাঃ- না আপা ঠান্ডা লাগছে। রাখছি এখন নিজের খেয়াল রাখিস।
আপাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা কেটে দিলাম। তারপর মায়ের কাছে গেলাম, অনেক জ্বালিয়েছি মাকে। শত হলেও তো সে মা, মায়ের কাছে গিয়ে বললাম,
বাদশাঃ- মা আমাকে মাফ করে দিও।
মা হয়তো এমন কথা শিনে বিরক্ত হলো তারপর ঝাঝালো গলায় বললেন,
মাঃ- আমার কাছে এখন টাকা নেই এসব ঢং করতে হবে না। কোনো টাকা দিতে পারবো না আমি,
আমি হতাশ কন্ঠে বলে উঠলাম,
বাদশাঃ- মা আমি মরলে কি তুমি অনেক কষ্ট পাবে?
মা রাগী গলায় হতাশার সুর মিশিয়ে বললেন,
মাঃ- তুই মরলে আমি বেঁচে যাই। মরতে পারিস না তুই!
আমি সেখান থেকে চলে আসলাম। যা শোনার তা শুনে নিয়েছি। বাঁচার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই আমার। খাটের নিচে দড়ি রেখেছিলাম খেলায় সময় মাঠ গিয়ে নিতাম। আমার কাছেই দিয়ে ছিলো স্যার। দড়িটা বের করে ঘরের চালের কাঠের সাথে বেঁধে নিলাম ভালো করে। কাঠের ঘরে টিন যে কাঠের সাথে পেরেক দিয়ে আটকা থাকে সেই কাঠে দড়িটা শক্ত করে বেঁধে নিলাম। গলায় ফাঁসির আসামীর মতো করে দড়িটা লাগয়িে নিলাম। বেশ শক্ত করে আমার গলাটা আটকে ধরে রেখেছে দড়িটা। পায়ের নিচ থেকে চেয়ারটা সরালেই আমি এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিবো চিরে তরে...
লেখায়ঃ ফারহানা কবীর মানাল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন