জীবনের গল্প - স্বাবলম্বী - খবরের পাতা

ব্রেকিং

Post Top Ad

রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩

জীবনের গল্প - স্বাবলম্বী


জীবনের গল্প - স্বাবলম্বী


বিয়ের সময় পাত্র পক্ষের একটাই দাবি ছিল মেয়ের চাকরি করা চলবে না। ভূগোল নিয়ে মাস্টার্স করা বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে অনামিকা প্রথমে রাজি না হলেও বাবা মায়ের চাপে শেষমেশ রাজি হয়। বনেদি পরিবার, ছেলের ভাল ব্যবসা। টাকা পয়সার অভাব নেই। বিয়ের দুএকটা বছর ঘুরতে না ঘুরতেই জামাইয়ের কাপড়ের দোকানে আগুন লেগে বহু ক্ষয়ক্ষতি হল। প্রায় পথে বসার মত অবস্থা। 

আমার তো খুব করুন অবস্থা, তুমি একটু চাকরি বাকরির চেষ্টা করে দেখ না ব্যবসাটাকে দাঁড় করানো যায় কিনা। বলেছিলো অনামিকার স্বামী অনিকেত। সংসারের কথা ভেবে অন্তঃসত্ত্বা অনামিকা ব্যাংকের পরীক্ষার জন্য শুরু করেছিল অমানুষিক পরিশ্রম। দু'বছরের মধ্যে একটা চাকরিও পেয়ে যায় সে। অনামিকা যখন অফিসে যায় ছোট্ট মেয়ে তিথি থাকে দাদু ঠাকুমার কাছে। বছর তিনেকের মধ্যে অনিকেতের ব্যবসা আবার ঘুরে দাঁড়ায়। রাত্রি বেলায় একদিন অনিকেত অনামিকাকে কাছে টেনে নিয়ে বলে, এবার চাকরিটা ছেড়ে দাও। কি দরকার আর। তিথিকে মানুষ কর। আমার ব্যবসাটা তো দাঁড়িয়ে গেছে। আমি তোমার প্রোগ্রামিং করা রোবট নয় যে তোমার সব কথা শুনতে হবে। অনামিকা বলল। 

তা ছাড়বে কেন, তাহলে কচি ম্যানেজারের সাথে ঢলাঢলি, হাহা হিহি এসব যে বন্ধ হয়ে যাবে। কাল থেকে তোর অফিস যাওয়া বন্ধ। যদি যাস তাহলে মেরে তোর দাঁতগুলো ভাঙবো। দুশ্চরিত্র মেয়েছেলে কোথাকার।' রাগে গরগর করতে করতে এসব কথা বলে চলল অনিকেত। 

পরদিন অনিকেত বেরিয়ে যাওয়ার পর অনামিকা আর ব্যাংকে যায় নি। মেয়ে তিথিকে নিয়ে সোজা বাপের বাড়ি। যাওয়ার সময় শাশুড়ি বাধা দিয়ে বলেছিল, 'তোমার আজকাল দেখছি খুব তেজ হয়েছে বৌমা। চাকরি করছো বলে চ্যাটাং চ্যাটাং কথাও শিখেছো। বলি মেয়েমানুষের এরকম তেজ ভালো না। এখন যাচ্ছ দুদিন পর আবার তো সুড়সুড় করে ফিরে আসবে।

- আমি সুড়সুড় করে বাড়ি আসি নাকি আপনার পোষ্য জানোয়ারটা ল্যাজ ল্যাজ নাড়তে নাড়তে আমার কাছে আসে সেটাই দেখবো। অনামিকা এই বলে মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। 

এসেই সবকিছু জানিয়ে মাকে সোজাসাপ্টা একটা কথাই বলেছিল, শোনো মা, আমি এখানে সারাজীবনের মত থাকতে আসিনি। আমি এসেছি সেই অধিকারে যে অধিকারে এক মেয়ে আসে তার বাপের বাড়িতে। একটা ফ্ল্যাট বা বাড়িভাড়া দেখে তিথিকে নিয়ে চলে যাব। তোমাদের আমি একমাত্র মেয়ে তাই তোমাদের দেখাশোনার দায়িত্ব পুরোটাই আমার। তোমরা আমার সাথে আসতে পারো আবার নাও আসতে পারো। সেটা তোমাদের মর্জি'। বাবা মা বুঝে গেছিল 'মানিয়ে নিতে হয়' কিংবা 'মাথা ঠান্ডা করে আর কিছুদিন ভেবে দেখ' এই জাতীয় কথা বলে কোন কাজ হবে না। 

অনামিকা এখন একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকে। বাবা মাও তার সাথেই থাকে। অনিকেত দুয়েকবার এসেছিল কিন্তু অনামিকা ঘরেই ঢুকতে দেয়নি। শাসিয়ে গেছে, - 'দেখে নেব'। অনামিকা মেয়ে তিথিকে রোজ সন্ধ্যেবেলা পড়াতে বসে। তার মেয়েকে বোঝায়, ' শুধুমাত্র আর্থিক সচ্ছলতার জন্য নয় স্বাধীনতা এবং আত্মসম্মানের সহিত সমাজে এবং বিশেষ করে পরিবারের কাছে  মাথা উঁচু করে বাঁচতে হলে মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়া একান্ত প্রয়োজন নাহলে সারাজীবন কলুর বলদের মত মানিয়ে নিতে হবে'।


কলমেঃ বিশ্বজিৎ ঘোষ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad