সন্দেহের গল্প - খবরের পাতা

ব্রেকিং

Post Top Ad

রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫

সন্দেহের গল্প

 সন্দেহ
লেখাঃ আহমেদ মাসুম

Writter Ahmed Masum


এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মনে হলো সে মারা যেতে পারে কিংবা তাঁর মরে যাওয়া উচিৎ। 
প্রথমবার , তখন তার বয়স সাত , দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।সেবার পাড়ায় কলেরার মহা উৎসব চলছিল। যে বাড়িতেই যাচ্ছিল সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছিল দু-চারজনকে।শোক যেন উৎসবে রুপ নিয়েছিল , প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো বাড়িতে মিলাদ-মাহফিল লেগেই ছিল।
করীমের বেশ আনন্দ হতে লাগল , মিষ্টি আর মাংসের লোভে তার রাতের ঘুম হারাম হতে লাগল। কিন্তু এই উৎসবে ভাটা পড়তে বেশিদিন লাগল না। পাড়ার সব বাড়ি বেড়ানো শেষে কলেরা এলো তাদের বাড়িতে। প্রথমে ধরলো সত্তর বছরের দাদুকে, উঠানের শেষ দিকটায় কলতলার পাশ ঘেষে আধ-পাঁকা যে ঘরটিতে দাদু সারাক্ষণ শুয়ে-বসে থাকেন সেই ঘরটাতেই প্রথমে এলো কলেরা। সম্ভবত আলাপ করতেই এসেছিল কিন্তু দাদুকে কলেরার ভালোই লেগেছিল বলতে হবে , নইলে এক সপ্তাহ যাবৎ মরার মতো পরে থাকা লোকটার সাথে কেউ থাকতে পারে ? কলেরার শুধু দাদুকেই ভালো লাগে নি , কি মনে করে করীমকেও ভালো লেগে গেল  আরো এক সপ্তাহ। অবশেষে, পনেরো দিন পর কলেরা সত্তর বছরের দাদুকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেল , বলতে গেলে এলাকা ছেড়েই চলে গেল। মরি-মরি করে সে যাত্রায় রক্ষা। তখন করীমের মনে হয়েছিল সে আর বাঁচবে না।

আজ দ্বিতীয়বারের মতো তার একই ধারনা হলো। বিকাল থেকে রাত তিনটা অব্দি সে এই ধারনাটা তার মাথা থেকে ঝেরে ফেলতে পারল না। মরে যাওয়া জোছনার আলোয় জানালার ধার ঘেষে কালো দানবের মতো কি একটা তার দিকে এগিয়ে আসছে , যেন এসে বসবে তার বুকের উপর। তাঁর মাথা ঝিম ধরে আছে , বমি বমি লাগছে। এখন এত রাতে কাউকে ডাকাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
ওর শিশুসুলভ মন মাকড়শার জালের মতো বিস্তার লাভ করছে , সেই জালের ফাঁক গলে ভাবনা মেলেছে ডানা। যেন কোনো আপেক্ষিক ভাবনা ওকে আরো বেশি আপেক্ষিক করে তুলছে। সুবিমল এখন কোথায় ? সম্ভবত দিল্লিতে , কি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে , নিজস্ব বাংলো , মোটা অংকের মাইনে।ভারতে তো রুপির হিসেব , নাকি ওরা ওকে ডলারে বেতন দেয় ? আর সাগর ? ওতো ব্যাংকার। তা হোক , করীমের তাতে কি এসে যায়।মাসিক বারো হাজার টাকা ওতো আফরোজার হাতেই তুলে দেয় , সেই টাকা দিয়ে মেয়েটি কি করে যে সংসারটা টিকিয়ে রেখেছে ! করীম তা কল্পনাও করতে চায় না।
আজ ওদের একসঙ্গে থাকার ছয় বছর। বসকে বলে তাই পাঁচটা বাজতে এক ঘন্টা আগেই বের হয়েছিল , বের হয়ে সোজা নিউমার্কেট। সেখান থেকে আফরোজার জন্য শাড়ি আর অন্যসব কি যেনো কিনে খুব দ্রুতই ফিরছিল , হঠাৎই ওর মনে হলো বলাকার সামনে আফরোজা দাঁড়িয়ে আছে নীল রঙের শাড়ি পরা। হঠাৎই কাউকে নিয়ে ও হলের মধ্যে ঢুকে গেল। সেই থেকেই মন কেমন খচখচ করছে। ওতো আফরোজাকে কম ভালোবাসে নি। অনটন ভুলিয়ে রেখেছে ভালোবাসা দিয়ে । আর ওরই বা কী দোষ ? সব জেনেই তো আফরোজা ওর হাত ধরেছে।
মনে হয়। এই একটা সন্দেহকে নিয়ে সে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিল না। না হয় দেখার ভুল হতেই পারে , তাই বলে বাসায় এসে আফরোজাকে সে পেল না কেনো ? না হয় মেনে নেওয়া যেতেই পারত কোনো কাজে সে বাইরে গেছে কিন্তু ফিরতে এতো দেরি হলো কেনো ? ফিরলই না হয় দেরি করে , তাই বলে নীল রঙের শাড়ি পরেই ফিরল কেনো ? আর….
আর কিছুই ভাবতে পারছিল না করীম। শুধু মনে হচ্ছিল এই মুহূর্তে তার মরে যাওয়া উচিৎ।
রাতে এই বিষয়ে আফরোজার সাথে কোনো কথাও বলা হয়নি কিংবা কোথায় গিয়েছিলো তাও জানতে চাওয়া হয়নি। আর জানতে চাইবেইবা কেনো ? প্রত্যেকেরই একটা আলাদা জগৎ আছে। এতদিন তো ওর মনে কোনো প্রশ্ন জাগে নি। হঠাৎ আজ ? নাকি আরো আগে থেকেই ? করীমের মন দিনে দিনে কেমন জেন ছোট হয়ে যাচ্ছে । ছোট হয়ে যাচ্ছে অফিসের কলিগের মুখে বউয়ের প্রশংসা শোনার পর থেকেই। আজও তো ঐ কলিগ অফিস ছুটির এক ঘন্টা আগে বের হলো , ওর সাথেই। বের হতে হতেই কথা হচ্ছিল তার কোন আত্মীয় অসুস্থ , সেখানে যেতে হবে। বলাকার সামনে যার হাত ধরে আফরোজা খুব দ্রুত হলের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল সে ঐ কলিগ নয় তো ? ছিঃ এত জঘণ্য ভাবনা তর মাথাতে আসা ঠিক না ! করীম নিজেকে ধিক্কার দেয়।
সে আর ভাবতে পারছিল না। তার ভাবনার জগৎ এলোমেলো হতে হতে ঘুমের সাগরে তলিয়ে গেল।
খুব ভোরে অনুর ফোনে ঘুম ভাঙল করীমের।
জানিস! কাল আফরোজা এসেছিল বিকাল চারটার দিকে। অনেক চেষ্টা করেও তিন ঘন্টার বেশি আটকে রাখতে পারলাম না। একদিন সময় করে দুজনে এসে বেড়িয়ে যা না?
মনের ভেতর থেকে মেঘ আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে। অনু তো থাকে মিরপুরে , আর করীম আগারগাঁও। না , মিরপুর যেতে হলে নিউমার্কেট যাওয়া লাগে না।
আফরোজা চা করে করীমের পাশে এসে বসেছে।
 
আজ সকাল থেকেই একটানা হিমেল হাওয়া বইছে। গতকালের ভাপসা গরমের পর মনে হয় আজ বৃষ্টি নামবে।
মনের মধ্যে থেকে সন্দেহের মেঘ কাটতে না কাটতেই ঝুপ করে বৃষ্টি নামলো ।
আজ করীমের খুব বাঁচতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে আফরোজার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad