আমি কী রকম ভাবে বেঁচেআছি - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় - খবরের পাতা

ব্রেকিং

Post Top Ad

রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫

আমি কী রকম ভাবে বেঁচেআছি - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

Ami Ki Rokom  Vabe Beche Achi - Sunil Gangopadhyay
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়



আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি
তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ,
এই কি মানুষজন্ম?
নাকি শেষ পুরোহিত কঙ্কাকালের পাশা খেলা!
প্রতি সন্ধ্যেবেলা আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে,
হৃদয়কে অবহেলা করে রক্ত,
আমি মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বস থাকি-
তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবো বলে।

আমি আক্রোশে হেসে উঠি না,
আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি,
মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে;
খাঁটি অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে
দেখেছি দেশলাই জ্বেলে-
(ও-গাঁয়ে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই!)

আমি স্বপ্নের মধ্যে বাবুদের বাড়ির ছেলে-
সেজে গেছি রঙ্গালয়ে,
পরাগের মতো ফুঁ দিয়ে উড়িয়েছি দৃশ্যলোক
ঘামে ছিল না এমন গন্ধক
যাতে ক্রোধে জ্বলে উঠতে পারি।

নিখিলেশ, তুই একে কী বলবি?
আমি শোবার ঘরে নিজের দুই হাত পেরেকে-
বিঁধে দেখতে চেয়েছিলাম যীশুর কষ্ট খুব বেশি ছিল কি না ?
আমি ফুলের পাশে ফুল হয়ে ফুটে দেখেছি,
তাকে ভালোবাসতে পারি না।

আমি কপাল থেকে ঘামের মতন মুছে
নিয়েছি পিতামহের নাম,
আমি শ্মশানে গিয়েছি মরে যাবার বদলে,
মাইরি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

নিখিলেশ, আমি এই-রকমভাবে বেঁচে আছি,
তোর সঙ্গে জীবন বদল করে কোনো লাভ হলো না আমার-
একি নদীর তরঙ্গে ছেলেবেলার মতো ডুব সাঁতার?
অথবা চশমা বদলের মতো কয়েক মিনিট আলোড়ন?
অথবা গভীর রাত্রে সঙ্গমনিরত
দম্পতির পাশে শুয়ে পুনরায় জন্ম ভিক্ষা?
কেননা সময় নেই আমার-

ঘরের দেয়ালের চুন-ভাঙা দাগটিও বড় প্রিয়।
মৃত গাছটির পাশে উত্তরের
হাওয়ার কিছুটা মায়া লেগে আছে।
ভুল নাম, ভুল স্বপ্ন থেকে বাইরে এসে
দেখে উইপোকায় খেয়ে গেছে চিঠির বান্ডিল,
তবুও অক্লেশে হলুদকে হলুদ বলে ডাকতে পারি।

আমি সর্বস্ব বন্ধক দিয়ে একবার
একটি মুহূর্ত চেয়েছিলাম, একটি...
ব্যক্তিগত জিরো আওয়ার;
ইচ্ছে ছিলো না জানাবার
এই বিশেষ কথাটা তোকে।
তবু ক্রমশই বেশি করে শীত, রাত্রে
এ রকম জলতেষ্টা আর কখনও পেতো না,
রোজ অন্ধকার হাতড়ে টের পাই তিনটি ইঁদুর।
ইঁদুর না মুষিক?
তা হলে কি প্রতীক্ষায় আছে অদূরেই সংস্কৃত শ্লোক?

পাপ ও দুঃখের কথা ছাড়া আর এ অবেলায়
কিছুই মনে পড়ে না।
আমার পূজা ও নারী হত্যার ভেতরে বেজে ওঠে সাইরেন।
নিজের দু’হাত যখন নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ করে
তখন মনে হয় ওরা সত্যিকারের।
আজকাল আমার নিজের চোখ দুটোও মনে হয়
একপলক সত্যি চোখ।
এরকম সত্য পৃথিবীতে খুব বেশি নেই আর।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad