বিবাহিত জীবন নিয়ে আগে থেকে কোনো ধারণাই করা যায় না। সবাই সুখী হতে চায়। কেউ সুখী হয়, কেউ হয় না।
অজানা-অচেনা মানুষটাকে হুট করে অনেকেই বিয়ে করতে চান না। আবার দীর্ঘদিনের চেনা মানুষটির সঙ্গেও বিয়ের পর বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা শোনা যায়। এমনও দম্পতি আছে, যাদের পারিবারিক সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়েছে, কিন্তু তারা আগে একে অন্যকে চিনতেন না। এবং বিয়ের পর তারা আজীবন একই ছাদের নিছে একসাথে সুখে-শান্তিতে কাটিয়ে দিয়েছেন।
Love Marriage বা প্রেমর বিয়ের ক্ষেত্রে পুরুষ বা নারী তাঁদের মনের মতো সঙ্গী বেছে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি স্বাধীনভাবে নিজেই নিজের জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার সুযোগ পান।
লাভ ম্যারেজ হচ্ছে একটি আধুনিক বিবাহ পদ্ধতি এবং এটি পশ্চিমা কালচার থেকে এসেছে। যদিও উপমহাদেশে প্রাচীন কাল থেকেই অল্প-স্বল্প লাভ ম্যারেজ হয়ে আসছে। অনেকেই মনে করে, যে মানুষটার সাথে সারাটা জীবন কাটাবো সে চেনা জানা বা আগে থেকে তার সাথে মেলামেশা থাকলে ভাল হয়। যাতে দুজন দুজনার সব কিছু জানা থাকে। এছাড়াও আগে থেকে জানাশোনা থাকায় দুজনার সকল কর্মকান্ড, আন্তরিকতা, মিলমিশ ইত্যাদি দুজনের একই রকম হয় বা একজনের পছন্দ-অপছন্দ অপরজন কিভাবে গ্রহন করবে তা জানা থাকে ফলে দুজনেই সুখে জীবন নির্বাহ করতে পারে।
প্রসঙ্গত, ইদানিং প্রেম করে বিয়ে করা খুবই সাধারণ ব্যাপার এবং খুব ট্রেন্ডিও। আজকের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নিজেই নিজের জীবনসঙ্গীকে বেছে নেওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। সেক্ষেত্রে নিজের জীবনসঙ্গীর মধ্যে সে কী কী গুণ প্রত্যাশা করে সেইসবও দেখে নেওয়ার সুযোগ থাকে লাভ ম্যারেজের ক্ষেত্রে।
বিশেষজ্ঞের মতে; সবকিছু খুব ভালো করে জেনে নিয়ে তবেই সারা জীবন একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া বা বিয়ের মতো বড় সিদ্ধান্তটি নেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিয়ের আগে, অর্থাৎ মন দেয়া-নেয়ার সময় একে-অপরের প্রতি বিশ্বাসের প্রমাণ দেওয়া বা পাওয়ারও যথেষ্ট সুযোগ থাকে ৷ সুযোগ থাকে অন্যজনের ভালো লাগা-মন্দ লাগা, চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে জানারও ৷ বিয়ের আগে প্রেম বা বন্ধুত্ব থাকলে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকে কম।
আজকাল বিয়ের পর অনেক দম্পতির মধ্যে তাদের পুরনো প্রেম নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকে৷ কিন্তু প্রেম করে বিয়ে করলে এর কোনো সুযোগ থাকে না।
বিয়ের পর যৌতুকের মতো নানা কারণে যে কলহ বা ভুল বোঝাবুঝি হয়, তা এড়ানো সম্ভব যদি আগে থেকেই ছেলে-মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব বা প্রেম থাকে৷ কারণ প্রেম করে বিয়ে হলে পরিবারের বড়রা সাধারণত এ সব ব্যাপারে চুপ করে থাকাটাই শ্রেয় বলে মনে করেন৷
লাভ ম্যারেজ বা প্রেমর বিয়ের কিছু অসুবিধাঃ
Love Marriage বা প্রেম করে বিয়ে করার কিছু অসুবিধা আছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রেমর বিয়েতে পরিবারের সাপোর্ট পাওয়া যায় না। আপনার পছন্দের জীবনসঙ্গীকে যদি পরিবারের মানুষ মেনে না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
প্রেম করে বিয়ে করর পর যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া অশান্তি হয় তাহলে পরিবারের পক্ষ থেকে সাপোর্ট পাওয়া যায় না।
প্রেমে করার সময় একটা আলাদা আকর্ষন থাকে। দুজনেই দুজনকে ইম্প্রেস করার মানসিকতা থাকে। ফলে সামান্য ভূল ত্রুটি গুলো না ধরে মজা হিসাবে গ্রহন করে। কিন্তু বিয়ের পর দুজনই বুঝতে পারে যে বিবাহিত মানুষকে এত ইম্প্রেসের দরকার কি। সে এমনিতেই স্বামী/স্ত্রী থাকবে। তাই ঝগড়া লাগে এবং দুজন দুজনকেই অভিযোগ করে যে, তুমি পাল্টে গেছ, আমাকে আর আগের মত ভালোবাসনা, এমন জানলে তোমাকে বিয়ে করতাম না।
মানুষ নতুনত্ব আবিষ্কার প্রিয়। কিন্তু লাভ ম্যারেজ পুরানা হওয়ায় একে অপরের প্রতি আকর্ষণ কমে যেতে থাকে। লাভ ম্যারেজ বা প্রেমর বিয়ের ক্ষেত্রে যেহেতু আগে থেকে দুজন দুজনার সবকিছু জানা থাকে, তাদের দুর্বল পয়েন্টে গুলোও জানা থাকে তাই এগুলো দিয়া আঘাত করে কথা ওঠে।
যেহেতু প্রেমের সময় দুজনই ব্যাচেলর থাকে এবং ভবিষ্যতের কোন ভাবনা থাকেনা তাই যখন খুশি দেখা করা ঘুরে বেড়ানো প্রেমকে আকর্ষণীয় মোহিত করে। কিন্তু বিয়ের পর নতুন বাস্তবতা শুরু হয়, কাজ অফিস, ভবিষ্যত ভাবনা ইত্যাদি সংসার চালাতে ব্যস্ত থাকতে হয় পুরুষটিকে, এক্ষেত্রে স্ত্রী সহজে অভিযোগ করে যে, প্রেমের সময় সব ছেড়ে আমায় ভালবাসতে এখন তো তার কিছুই নাই।
মানুষ মাত্রই ভুল। প্রত্যেকের মাঝেই কিছু ত্রুটি বা দূর্বলতা থাকে। কেউ'ই পারফেক্ট নয় – কথাটা যেমন ঠিক, তেমনই বিয়ের আগে এ সমস্ত কথা জানা থাকলে একে-অপরের ত্রুটি গুলো মেনে নেওয়া সহজ হয়।
প্রথম দর্শনে হোক কিংবা দীর্ঘদিনের পরিচয়ে প্রেম। প্রেম করে বিয়ে করার ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার পারস্পরিক বোঝাপড়ার সম্পর্ক খুব ভালোভাবে তৈরি হয়। একে অপরের দোষ-গুণ, ভালোলাগা, খারাপ লাগা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা সব বিষয়েই একটা প্রচ্ছন্ন ধারণা তৈরি হয় যা খুবই ইতিবাচক দিক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন