ত্রিশের দশকের বিশিষ্ঠ পাঁচ জন কবি রবীন্দ্র প্রভাবের বাইরে গিয়ে বাংলা ভাষায় আধুনিক কবিতা রচনা করেছিলেন। তাদের ৫ জনকে বাংলা সাহিত্যে পঞ্চ পান্ডব বা ত্রিশের কবি বা কল্লোলের কবি বলা হয়। রবীন্দ্রপ্রভাবের বাইরে গিয়ে বাংলা ভাষায় আধুনিক কবিতা সৃষ্টি করেছিলেন তাঁরা। সাহিত্যে নিজেদের সাতন্ত্র্য বজায় রেখে আধুনিক বাংলা কবিতায় অসামান্য অবদান রাখায় তাদের ৫ জনকে বাংলা সাহিত্যে পঞ্চপাণ্ডব বলা হয়।
তারা হলেনঃ-
১. অমিয় চক্রবর্তী
২. জীবনানন্দ দাশ
৩. বিষ্ণু দে
৪. বুদ্ধদেব বসু
৫. সুধীন্দ্রনাথ দত্ত।
[মনে রাখার শর্টকাটঃ অ জী বি ব সু ]
[মনে রাখার শর্টকাটঃ অ জী বি ব সু ]
অমিয় চক্রবর্তী(১৯০১-১৯৮৬)::
জন্ম ১০ এপ্রিল, ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুরে। তিনি একজন কবি, গবেষক ও শিক্ষাবিদ। তাঁর পিতা দ্বিজেশচন্দ্র চক্রবর্তী আসামের গৌরীপুর রাজ্যের দীউয়ান ছিলেন। অমিয় চক্রবর্তী পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২১ সালে বি.এ পাস করে শান্তিনিকেতনের গবেষণা বিভাগে যোগদান করেন।
১৯২৬ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন ও সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। অমিয় চক্রবর্তী তাঁর জীবনের প্রথম দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিকট-সান্নিধ্যে এসেছিলেন। ১৯২৬ থেকে ১৯৩৩ পর্যন্ত তিনি রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । তিনি ১৯৩৩ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কাজে যোগ দেন এবং ১৯৩৭ সালে সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৪০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন। ১৯৪৮-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি সপরিবারে আমেরিকায় বসবাস করেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত হাওয়ার্ড, বস্টন ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক প্রাচ্য ধর্ম ও সাহিত্যে অধ্যাপনা কাজে নিয়োজিত ছিলেন। কবি ইয়েটস, জর্জ বার্নাড’শ, আলবার্ট আইনস্টাইন, রবার্ট ফ্রস্ট, আলবার্ট সোইটজর, বোরিস পান্তেরনাক, পাবলো কাসালস্ প্রমুখ বিশ্ববরেণ্য লেখকদের সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। প্রায় সবগুলো মহাদেশের অসংখ্য দেশে নানাবিধ কর্মসূত্রে তিনি ভ্রমণ করেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে বক্তৃতা দিয়েছেন। এ কারণে অমিয় চক্রবর্তীর কবিতায় আন্তর্জাতিক বিশ্বপরিবেশের অনেক ভৌগোলিক স্থানের নাম, বর্ণনা ও চিত্র লক্ষ করার যায়। এছাড়াও তাঁর কবিতায় আছে এ অঞ্চলের চিরায়ত বিষয় মরমী সুর ও আধ্যাত্মিকতা।
* অমিয় চক্রবর্তী সম্পর্কে গুরত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তরঃ
১। অমিয় চক্রবর্তীর জন্ম কোথায়?
উত্তরঃ পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুরে
২। অমিয় চক্রবর্তীর জন্ম তারিখ কত?
উত্তরঃ ১০ই এপ্রিল ১৯০১
৩। তার পেশা কি ছিল?
উত্তরঃ অধ্যাপনা।
৪। তার পিতার নাম কী?
উত্তরঃ দ্বিজেশ চন্দ্র চক্রবর্ত্তী।
৫। কাদের সঙ্গে অমিয় চক্রবর্তীর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল?
উত্তরঃ কবি ইয়েটস, জর্জ বার্নাডশ, আলবার্ট আইনস্টাইন, রবার্ট ফ্রস্ট, আলবার্ট সোয়াইটজর প্রমুখ বিশ্ববরেন্য মণীষীর সঙ্গে।
৬। তিনি মূলত কি হিসেবে পরিচিত?
উত্তরঃ একজন শীর্ষ স্থানীয় আধুনিক কবি।
৭। তিনি কোন সময়ের কবি ছিলেন?
উত্তরঃ ত্রিশের দশকের।
৮। কবিতা ছাড়াও কিসে তাঁর পরিচিতি ছিলো?
উত্তরঃ গদ্যশিল্পী হিসেবে।
৯। বাংলা কাব্যের ক্ষেত্রে অমিয় চক্রবর্তীর অবস্থান কোথায়?
উত্তরঃ রবীন্দ্র প্রভাবিত কাব্য-বলয়ের বাইরে।
১০। তাঁর গদ্য রচনাগুলো কী কী?
উত্তরঃ ‘চলো যায়’, ‘সাম্প্রতিক’, ‘পুরবাসী’, ‘পথ অন্তহীন’ ইত্যাদি।
১১। তাঁর প্রকাশিত বিশেষ কাব্যগ্রন্থগুলো কী কী?
উত্তর: ‘খসড়া’,‘এক মুঠে’, ‘মাটির দেয়াল’, অভিজ্ঞান বসন্ত’, ‘অনিঃশেষ’ ইত্যাদি।
১২। "বাংলাদেশ" কবিতাটি তিনি কোন প্রেক্ষাপটে রচনা করেন?
উত্তরঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট।
১৩। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন ডিগ্রি অর্জন করেন?
উত্তরঃ ডিফিল ডিগ্রি
১৪। তিনি কী কী পুরস্কার ভূষিত হন?
উত্তরঃ ‘ইউনেস্কো পুস্কার’ (১৯৬০), ‘ভারতীয় ন্যাশনাল একাডেমি পুরস্কার’, ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভোষণ’ উপাধি (১৯৭০) প্রাপ্ত।
১৫। অমিয় চক্রবর্তী কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তরঃ ১৯৮৬ সালে।
জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪)::
কবি জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের আদি নিবাস ছিল বিক্রমপুরের গাওপাড়া গ্রামে। তিনি একজন কবি ও শিক্ষাবিদ। তাঁর পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন স্কুলশিক্ষক ও সমাজসেবক এবং মাতা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন একজন কবি। জীবনানন্দ বরিশাল ব্রজমোহন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন ১৯১৫ সালে, বি এম কলেজ থেকে আই.এ (১৯১৭) এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স সহ বি.এ (১৯১৯) ও ইংরেজিতে এম.এ (১৯২১) পাস করেন। আইন কলেজে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি পরীক্ষা দেননি। জীবনানন্দ দাশ ১৯২২ সালে কলকাতা সিটি কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯২৯ সালে তিনি সদ্য প্রতিষ্ঠিত বাগেরহাট প্রফুল্লচন্দ্র কলেজে যোগ দেন, কিন্তু কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে কলকাতায় চলে যান এবং অই বছরই তিনি দিল্লির রামযশ কলেজে যোগ দেন এবং ১৯৩০-এ আবার দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। পরে কিছুকাল বেকার থেকে ১৯৩৫ সালে তিনি বরিশালের বিএম কলেজে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের কিছু আগে তিনি সপরিবারে কলকাতা চলে যান। এভাবে তাঁর কর্মজীবন বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনায় এবং মাঝে মাঝে অন্য পেশায় অতিবাহিত হয়। জীবনানন্দ ছিলেন বাংলা কাব্যান্দোলনে রবীন্দ্রবিরোধী কাব্যধারার অন্যতম কবি। পাশ্চাত্যের মডার্নিজম ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বঙ্গীয় সমাজের বিদগ্ধ মধ্যবিত্তের মনন ও চৈতন্যের সমন্বয় ঘটে ওই কাব্যান্দোলনে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে ফুটে উঠেছে তাই তিনি‘রূপসী বাংলার কবি’ নামে খ্যাত হয়েছেন। জীবনানন্দ দাশ প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা করেছেন। তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি।
১৯৫৪ সালের ১৪ই অক্টোবর, কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় জীবনানন্দ দাশ আহত হন। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তার শরীর দলিত হয়ে গিয়েছিল। ভেঙ্গে গিয়েছিল কণ্ঠা, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় কলকাতার শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। ২২শে অক্টোবর রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে হাসপাতালে কবির মৃত্যু হয়।
জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে গুরত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তরঃ
১। জীবনানন্দ দাশের জন্ম ১৮৯৯ সালে আরেক জন কবিও একইর বছরে জন্ম গ্রহন করেন, তিনি কে?
উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলাম
২। জীবনানন্দ দাশের জন্মস্থান কোন জেলায়?
উত্তর: বরিশাল জেলা।
৩। নিচের কোন গ্রন্থটি উপন্যাস নয়?
উত্তর: কবিতার কথা।
৪। “মহা পৃথিবী” কাব্যগ্রন্থ কার লেখা?
উত্তর: জীবনানন্দ দাস
৫। জীবনানন্দ দাসের জন্ম কত সালে?
উত্তর: ১৮৯৯।
৬। ধানসিঁড়ি নদী কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: বরিশাল।
৭। কোন কবির মাও একজন কবি?
উত্তর: জীবনানন্দ দাশ।
৮।কবি জীবনানন্দ দাশের ওপর যে বিদেশী গবেষক গবেষনা করেন তার নাম কী?
উত্তর: ক্লিনটন বি সীল।
৯। জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ কোনটি?
উত্তর: ঝরা পালক।
১০। রূপসী বাংলার কবি কে?
উত্তরঃ জীবনানন্দ দাশ।
১১। ‘রূপসী বাংলা’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর: জীবনানন্দ দাশ।
১২। জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’ কিসের পরিচায়ক?
উত্তর: স্বদেশ প্রীতি ও নিসর্গময়তা।
১৩। ‘ধূসর পান্ডুলিপি’ কার রচনা?
উত্তর: জীবনানন্দ দাশ।
১৪।‘বনলতা সেন’ কার রচনা?
উত্তর: জীবনানন্দ দাশ।
১৫। বাংলা সাহিত্যের একজন আধুনিক কবি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে এডগার এলেন পো রচিত ‘টু হেলেন’ কবিতা থেকে কোন কবিতাটি রচনা করে?
উত্তর: বনলতা সেন।
১৬। জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধগ্রন্থ কোনটি?
উত্তর: কবিতার কথা।
১৭। সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া তাঁর আর একটি উপন্যাসের নাম কী?
উত্তর: কল্যাণী (প্রকাশ : দেশ ১৯৯৯)
১৮। জীবনানন্দ দাশ কোন পত্রিকার সাহিত্যপাতা সম্পাদনা করেন?
উত্তর: দৈনিক স্বরাজ পত্রিকা
১৯। কবে তিনি ট্রামের নিচে পড়ে আহত হন?
উত্তরঃ ১৯৫৪ সালের ১৪ই অক্টোবর
২০। কবি জীবনানন্দ দাশ কবে মৃত্যু বরন করেন?
উত্তরঃ ২২শে অক্টোবর, ১৯৫৪
বিষ্ণু দে (১৯০৯-১৯৮২)::
জন্ম ১৯০৯ সালের ১৮ জুলাই কলকাতার পটলডাঙ্গায়। একজন কবি, প্রাবন্ধিক, চিত্রসমালোচক ও শিল্পানুরাগী এবং তিনি ছবিও আঁকতেন। পিতা অবিনাশচন্দ্র দে ছিলেন অ্যাটর্নি। বিষ্ণু দে ১৯২৭ সালে কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউট ও সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আইএ (১৯৩০), সেন্ট পলস কলেজ থেকে ইংরেজিতে বিএ অনার্স (১৯৩২) এবং থেকে ইংরেজিতে এমএ (১৯৩৪) ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষা জীবন শেষে তিনি অধ্যাপনাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে ১৯৩৫ সালে কলকাতার রিপন কলেজে যোগদান করেন। পরে মৌলানা আজাদ কলেজ (১৯৪৪-১৯৪৭), ও কৃষ্ণনগর কলেজে (১৯৪৭-১৯৬৯) তিনি অধ্যাপনা করেন। বিষ্ণু দে মার্কসবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন। ত্রিশোত্তর বাংলা কবিতার নব্যধারার আন্দোলনের প্রধান পাঁচজন কবির অন্যতম ছিলেন তিনি। কাব্যভাবনা ও প্রকাশরীতিতে বুদ্ধিবৃত্তি ও মননশীলতাকে অঙ্গীকার করেই তিনি কবিতা লেখেন। তাঁর কবিতায় টি.এস এলিয়টের কবিতার প্রভাব রয়েছে। দেশের অতীত ও বর্তমানের নানা বিষয় এবং বিদেশের বিশেষত ইউরোপের শিল্প-সাহিত্যের বিচিত্র প্রসঙ্গ তাঁর কাব্যের শরীর ও চিত্রকল্প নির্মাণ করেছে। এসব কারণে তাঁর কাব্য দুর্বোধ্যতার অভিযোগ থেকে মুক্ত নয়। খ্যাতনামা কবি বিষ্ণু দে ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের সতীর্থ এবং চিত্রশিল্পী যামিনী রায়ের বন্ধু। যামিনী রায়ের অনুপ্রেরণায়ই তিনি শিল্প-সমালোচনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বেশ কয়েকখানি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। তিরিশের কাব্যধারায় বিষ্ণুদের মধ্যেই প্রথম রাবীন্দ্রিক কাব্যবলয় অতিক্রমণের প্রয়াস লক্ষ করা যায়। মার্কসীয় তত্ত্বকে জীবনাবেগ ও শিল্পসম্মত করে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে তাঁর সাফল্য অপরিসীম। সাহিত্যে তার অবদানের জন্য তিনি ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, নেহরু স্মৃতি পুরস্কার, এবং ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার লাভ করেছিলেন। এছাড়া তিনি সোভিয়েত ল্যান্ড অ্যাওয়ার্ড পান। ১৯৮২ সালের ৩ ডিসেম্বর তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
বিষ্ণু দে সম্পর্কে গুরত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তরঃ
১। বিষ্ণু দে কোথায়, কবে জন্মগ্রহন করেন?
উত্তর: কলকাতা, ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে।
২। তিনি কোন সাহিত্য গোষ্টীর লেখক?
উত্তর: কল্লোল সাহিত্য গোষ্টী।
৩। তিনি মূলত কি ছিলেন?
উত্তর: কবি, প্রাবন্ধিক ও চিত্র সমালোচক।
৪। তার কাব্য বৈশিষ্ট কী?
উত্তর: তিনি প্রাচ্য ও প্রশ্চাত্য মিথের সঙ্গে বাস্তবতার সংমিশ্রন ঘটান। তা্ছাড়া মার্কসীয় মতবাদকে নিজরে মতো গ্রহন করে প্রয়োগ করেন।
৫। তার প্রকাশিত অপর পত্রিকার নাম কী?
উত্তর: সাহিত্যপত্র (১৯৪৮)।
৬। বিষ্ণু দের প্রকাশিত প্রধান কাব্যগ্রন্থগুলোর নাম কী?
উত্তর: উর্বশী ও আর্টেমিস (১৯৩৩), চোরাবলি (১৯৩৭), সাত ভাই চম্পা (১৯৪৪), তুমি শুধো পঁচিশে বৈশাখ (১৯৫৮), স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ (১৯৬৩), সেই অন্ধকার চাই (১৩৩৭), রবিকরোজ্জ্বল নিজদেশ (১৩৮০)।
৭। তাঁর রচিত প্রবন্ধগুলোর নাম কী?
উত্তর: সাহিত্যের ভবিষ্যৎ (১৯৬৮), রবীন্দ্রনাথ ও শিল্পসাহিত্যে আধুনিকতা সমস্যা (১৯৬৬)।
৮। তাঁর রচিত অনুবাদ সাহিত্যের নাম কী?
উত্তর: এলিয়টের কবিতা (১৯৫০)।
৯। তিনি সাহিত্য রচনার জন্য কী কী পুরস্কারে ভূষিত হন?
উত্তর: ১৫৫- তে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার ও ১৯৭২- এ জ্ঞানপীট পুরস্কার।
১০। তিনি তাঁর রচনায় কী উপস্থাপনার ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেন?
উত্তর: মার্কসীয় তত্ত্বকে জীবনাবেগ ও শিল্পসম্মত করে।
১১। তিনি কত তারিখে মৃত্যুবরন করেন?
উত্তর: ৩রা ডিসেম্বর, ১৯৮২।
বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪)::
১৯০৮ সালের ৩০ নভেম্বর কুমিল্লায় তিনি জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পরিবারের আদি নিবাস ছিল বিক্রমপুরের মালখানগরে। জন্মের অল্প পরেই ধনুষ্টংকারে তাঁর মাতৃবিয়োগ ঘটে এবং পিতা ঢাকা বারের উকিল ভূদেবচন্দ্র বসু পরিব্রজ্যা গ্রহণ করে নিরুদ্দেশ হন। এমতাবস্থায় বুদ্ধদেব মাতুলালয়ে লালিত-পালিত হন। তাঁর শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের প্রথমভাগ কাটে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ঢাকায়। ১৯২৫ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। ১৯২৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) থেকে প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আই. এ. পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ইংরেজিতে ১৯৩০-এ প্রথম শ্রেণীতে বি. এ. অনার্স এবং ১৯৩১-এ প্রথম শ্রেণীতে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ছিলেন খুবই মেধাবী ছাত্র। বি. এ. অনার্স পরীক্ষায় তিনি যে নম্বর লাভ করেন তা একটি রেকর্ড; এবং অদ্যাবধি (২০২১) এ রেকর্ড অক্ষুণ্ণ আছে। বুদ্ধদেব বসু বিংশ শতাব্দীর একজন প্রভাবশালী বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক, সম্পাদক ও সাহিত্য-সমালোচক ছিলেন। ঢাকা থেকে প্রগতি (১৯২৭-১৯২৯) এবং কলকাতা থেকে কবিতা (১৯৩৫-১৯৬০) পত্রিকা প্রকাশ ও সম্পাদনা তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য কর্ম। কবিতাবিষয়ক কবিতা পত্রিকাটি তখন সাহিত্যিক মহলে উচ্চ প্রশংসা লাভ করে। রবীন্দ্রোত্তর কবিতা-আন্দোলনেও এর ভূমিকা স্বীকৃত; বুদ্ধদেব নিজেও রবীন্দ্র-প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে আসেন। শুধু কবিতা নয়, বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বুদ্ধদেবের স্বচ্ছন্দ বিচরণ ছিল। তিনি রোম্যান্টিক কবিচেতনার অধিকারী ছিলেন; তবে পরবর্তীকালে তিনি আবেগ অপেক্ষা মননশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মননশীল প্রবন্ধ ও সাহিত্য-সমালোচনায় তিনি সূক্ষ্ম বুদ্ধিবৃত্তির পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর গদ্যশৈলীতে আছে ব্যক্তিত্বের ছাপ। পদ্যগদ্য মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থসংখ্যা শতাধিক। ইংরেজি ভাষায় কবিতা, গল্প, প্রবন্ধাদি রচনা করে তিনি ইংল্যান্ড ও আমেরিকায়ও প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। বুদ্ধদেব বসু ১৯৭০ সালে পদ্মভূষণ উপাধি লাভ করেন।
১৯৬৭ সালে তপস্বী ও তরঙ্গিণী কাব্যনাট্যের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৭৪ সালে স্বাগত বিদায় গ্রন্থের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন। বুদ্ধদেব বসু ১৯৭৪ সালের ১৮ই মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
বুদ্ধদেব বসু সম্পর্কে গুরত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তরঃ
১। বুদ্ধদেব বসু কোথায় জন্মগ্রহন করেন?
উত্তর: কুমিল্লা।
২। তিনি কবে জন্মগ্রহন করেন?
উত্তর: ৩০শে নভেম্বর, ১৯০৮
৩। রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা সাহিত্যে কাকে সব্যসাচী লেখক বলা হয়?
উত্তর: বুদ্ধদেব বসুকে।
৪। বুদ্ধদেব বসু মূলত কী কী ছিলেন?
উত্তর: কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সম্পাদক।
৫। তিনি বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন?
উত্তর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, ইংরেজীতে।
৬। জগন্নাথ হলের ছাত্র অবস্থায় তিনি একটি পত্রিকা প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যা আজও বের হয়। তার নাম কী?
উত্তর: বাসন্তিকা।
৭। হুমায়ন কবিরের সাথে তাঁর সম্পাদিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা কোনটি?
উত্তর: চতুরঙ্গ।
৮। তাঁর রচিত স্মৃতিকথাগুলোর নাম কী?
উত্তর: আমার ছোটবেলা (১৯৭৩), আমার যৌবন (১৯৭৬)
৯। তিনি তাঁর রচনার জন্যে কী কী পুরস্কারে ভূষিত হয়?
উত্তর: সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, পদ্মভূষণ উপাধি ও রবীন্দ্র পুরস্কার।
১০। তাঁর মৃত্যু তারিখ কত?
উত্তর: ১৮ই মার্চ, ১৯৭৪।
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত::
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১ –১৯৬০):: ১৯০১ সালের ৩০ অক্টোবর কলকাতার হাতীবাগানে তাঁর জন্ম। পিতা হীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন একজন বিশিষ্ট দার্শনিক মায়ের নাম ইন্দুমতি বসুমল্লিক। প্রসিদ্ধ গায়িকা রাজেশ্বরী বাসুদেব তাঁর স্ত্রী। বিংশ শতকের ত্রিশ দশকের যে পাঁচ জন কবি বাংলা কবিতায় রবীন্দ্র প্রভাব কাটিয়ে আধুনিকতার সূচনা ঘটান তাদের মধ্যে সুধীন্দ্রনাথ অন্যতম। তাকে বাংলা কবিতায় “ধ্রুপদী রীতির প্রবর্তক” বলা হয়। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, মননশীলতা ও নাগরিক বৈদগ্ধ্য তাঁর কাব্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বাংলা কবিতায় তিনি দর্শনচিন্তার নান্দনিক প্রকাশ ঘটান। তিনি বাংলা গদ্যের আধুনিক রূপেরও প্রবর্তক। ১৯৬০ সালের ২৫ জুন কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়।
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পর্কে গুরত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তরঃ
১। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত কবে, কোথায় জন্মগ্রহন করেন?
উত্তর: ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে অক্টোবর, কলকাতায়।
২। তার পিতা-মাতার নাম কী?
উত্তর: ইন্দুমতী বসুমল্লিক, (দার্শনিক)হীরেন্দ্রনাথ দত্ত।
৩। কোন পত্রিকা সম্পাদনা করে তিনি অমর হয়ে আছেন?
উত্তর: ত্রৈমাসিক ‘পরিচয়’ (১৯৩১)। তিনি একধারে ১২ বছর এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। আধুনিক বাংলা সাহিত্যচর্চায় পত্রিকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ন ভূমিখা রেখেছে।
৪। তাঁর স্ত্রীর নাম কি?
উত্তর: ছবি বসু (বিয়ে: ২২/০৭/১৯২৪; বিচ্ছেদ: বৎসরাধিক কাল পর); রাজেস্বরী বসুরায় (বিয়ে: ২৯/০৫/১৯৪৩)।
৫। তিনি কোন কাব্যগ্রন্থ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উৎসর্গ করেছেন?
উত্তর: তন্বী (১৯৩০)। উৎসর্গপত্রে লিখেছেন: ‘রবীন্দনাথ ঠাকুরের শ্রীচরনে অর্ঘ্য। ঋনশোধের জন্য নয়, ঋনস্বীকারের জন্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন