বেজে গেছে সে টেলিফোন - ভালোবাসার গল্প - খবরের পাতা

ব্রেকিং

Post Top Ad

শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২

বেজে গেছে সে টেলিফোন - ভালোবাসার গল্প

Girl And Boy Talk Over Telephone - Bangla Love Story

কোনও কোনও দুপুরবেলা এরকম হয়। ল্যাপটপে মুখ গুঁজে যখন কাজ করছি। বাড়ির সবাই যখন ঘুমে ব্যস্ত। পশ্চিমের জানলা দিয়ে যখন সূর্যের আলোটা ঢোকে, যখন সব কিছু স্বাভাবিক মনে হয়, তখন একটা ফোন আসে। সমস্ত কিছু ওলোট-পালোট করতে দিতে ফোনটা আসে। ফোনটা থাকে প্রাক্তনের। 

- কীরে কেমন আছিস 

- ভালো, তুই কেমন আছিস 

- এই তো। তোদের অফিস খুলেছে... 

- নারে ওয়ার্ক ফ্রম হোম। তোর... 

- ওয়ার্ক ফ্রম হোম চলছে বলেই তোকে ফোন। 

- মানে 

- মানে আর কি, বাড়িতে বসে কাজ করতে করতে তোর কথা খুব মনে পড়ছে। তোর সঙ্গে কাটানো সময়। 

- তোর সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেকদিন কেটে গেছে। এখনো তোর আমার কথা মনে পড়ে। 

- সত্যি বলতে আগে পড়ত না। এখন পড়ে। বাড়িতে বসে কাজ করতে করতে অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে। আগে তো ভাবার সময় পেতাম না। 

- ভালো তো... 

- তোর মনে পড়ে না.. 

- না, পিছন ফিরে তাকাতে এখন আর ইচ্ছা করে না। যেমন আছি ভালো আছি। 

- বুঝলাম

- কী 

- আগের মতো ইমোশনাল আর তুই নেই। ব্রেক-আপের সময় মনে আছে তুই কত কান্নাকাটি করেছিলিস 

- মনে আছে... 

- আচ্ছা আমি যদি তোকে মাঝে মাঝে ফোন করি, তুই কিছু মনে করবি। 

- করিস না। আমার প্রয়োজনে, চরম বিপদে তোকে যখন পাইনি। এখন যখন কিছুটা থিতু হয়েছি, আর নতুন করে অশান্তির কোনও প্রয়োজন নেই। 

- ওকে। তোকে ডিস্টার্ব করলাম না!

- এখনও নয়, তবে, ভবিষ্যতে বার বার ফোন করলে একটু হবো বই কি

জানি, সে আমার সঙ্গে অনেক কথা বলতে চাইছে। অনেক দিন পর পুরনো কথা মনে পড়ছে। আমারও মনে পড়ে। পুরনো কথা। রাত্রিবেলা হঠাৎ করে বাবার শরীর খারাপ হতে লাগল। ভয়ে মা আর আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগল। কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। ওকে ফোন করেছিলাম। তখন প্রায় তিনটে। ফোন করেই যেতে লাগলাম। ফোন ব্যস্ত। পাগলের মতো দৌড়ে পাশের বাড়ি গেলাম সাহায্যের জন্য। তারপর সেখান থেকেই ডাক্তার, হাসপাতাল, অ্যাম্বুল্যান্স। 

বড্ড একা লাগছিল সেদিন। মাকে সান্তনা দিতে দিতে মনে হচ্ছিল, আমাকে কেউ সান্তনা দিক। বাকি রাতটা কারও কাঁধে মাথা দিই। না, সেদিন আর ফোন আসেনি। তারপরের দিনও ফোন আসেনি। আমি করেছিলাম ফোন। বন্ধ ছিল। চারদিন বার ডাক্তাররা যখন বললেন, আর ভয়ের কোনো কারণ নেই, একটু স্বস্তি পেয়েছিলাম। সেদিন হাসপাতাল থেকে ফেরার সময় অটো থেকে নেমে হাঁটছি, সে ফোন করেছিল। আমার কথা, আমার প্রশ্ন শোনার আগেই সে কথা বলতে শুরু করেছিল। এক নিঃশ্বাসে সে কথাগুলো বলেগেছিল। 

সত্যি বলতে মনে নেই কথাগুলো। শুধু একটা কথা এখনও কানে ভাসে। তোর মতো ন্যাকা ন্যাকা মেয়ের সঙ্গে আমি থাকতে পারব না। সরি। অনেক চেষ্টা করেছি। আরও অনেক অনেক কথা বলেছিল। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো কথাগুলো কানে ঢুকছিল। রাস্তার মধ্যে হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করেছিলাম।

সেদিনের পরেও নিজের মান সম্মান ভুলে বার বার ফোন করতে শুরু করেছিলাম। সে বোধহয় তখন আমাকে ব্লকলিস্টে ফেলেছিল। কোনও যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। চার বছরের সম্পর্কে তার কোনও বন্ধুকেও চিনতাম না, যাকে ফোন করতে পারি। যার মারফত যোগাযোগ করতে পারি। কিন্তু না... অনেক আগে থেকেই হয়তো সে পরিণতির কথা জানত। তাই কারও সঙ্গে যোগাযোগ সমস্ত রাস্তা আগে থেকে বন্ধ করে দিয়েছিল। 

বাবাকে যেদিন হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে আনলাম, মনে হল জীবন পেলাম। সেই জীবনটাকে উপভোগ করছি এখন। প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছি। আমার ভালো থাকার জন্য সত্যি বলতে বাইরের কোনও পুরুষের দরকার নেই। আমার বাবা-মার ভালো থাকাটাই যথেষ্ট। প্রাক্তন থাক প্রাক্তন হয়ে। বন্ধু হওয়ার বা বর্তমান হওয়ার আদৌ কী কোনও প্রয়োজন আছে।


বেজে গেছে সে টেলিফোন
তমালিকা 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Bottom Ad