স্বামী থাকা অবস্থায় ডিভোর্স ব্যতীত স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করলে, আইনে করণীয় কি? আজ জানবো এই বিষয়ে বিস্তারিতঃ
বিয়ে সংক্রান্ত প্রতারণা'র ঘটনা বর্তমানে আশঙ্কা;জনক;ভাবে বেড়েছে। এর মধ্যে স্বামী কিংবা স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় পরবর্তী বিয়ের অভিযোগ;ও পাওয়া যাচ্ছে। এসব প্রতারণা;মূলক ঘটনা থেকে বিভিন্ন সামাজিক অস্থিরতা, পারি'বারিক জটিলতা ও সহিংসতা'র সৃষ্টি হয় যা বেশিরভাগ সময় আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বাংলাদেশে বিয়ে এবং বিয়ে-বিচ্ছেদ পারিবারিক ধর্মীয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু বিয়ে সংক্রান্ত ফৌজদারি অপরাধ সংঘ;টনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় দণ্ডবিধি প্রযোজ্য হয়।
দ্বিতীয় বিয়ে করা স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রথম স্বামীর আইনি প্রতিকারঃ
মুসলিম পারি;বারিক আইন অনুযায়ী, ১ম স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক বিদ্যমান থাকা অবস্থায় স্ত্রী যদি পুনরা'য় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাহলে সেই ২য় বিয়ে অবৈধ, অকার্যকর ও বাতিল বলে গণ্য হবে। স্ত্রী ২য় বিয়ে করতে ইচ্ছু'ক হলে তাঁকে আবশ্যিক;ভাবে আগে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করতে হবে। ১৯৬১ সালে'র মুসলিম পারি;বারিক আইন অধ্যাদেশ অনুসারে ১ম স্বামীকে তালাকের নোটিশ প্রদানপূর্বক নব্বই দিন পর তালাক কার্যকর হওয়া সাপেক্ষে নির্দিষ্ট ইদ্দত পালন শেষে ২য় স্বামী গ্রহণ করা যেতে পারে। এই বিধান লঙ্ঘন করে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বলবৎ থাকা অবস্থায় স্ত্রী যদি স্বামীর জিম্মা থেকে পালিয়ে গিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেন সেক্ষেত্রে প্রথম স্বামী সেই স্ত্রী;র বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে পারেন। সেক্ষেত্রে অভি;যুক্ত স্ত্রী বাংলাদেশের ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড পেতে পারেন। সঙ্গে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। তবে দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারার এই বিধানে'র ব্যতি;ক্রম হতে পারে যদি সেই স্ত্রী তার পূর্বের স্বামীর ৭ বছর যাবত কোনো খোঁজ-খবর না পান, অথবা তিনি জীবিত থাকতে পারেন এমন কোনো তথ্য যদি জানা না যায়, তাহলে পর;বর্তী স্বামী'কে আসল ঘটনা জানিয়ে তাঁর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন। অর্থাৎ এই ব্যতি;ক্রমী ক্ষেত্রে স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ে শাস্তিযোগ্য হবে না।প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে স্ত্রীর পুনরায় বিয়ে: দ্বিতীয় স্বামীর আইনি প্রতিকার কী?
স্ত্রী যদি দ্বিতী;য় বা পর;বর্তী বিয়ে করা'র সময় যাকে বিয়ে করছেন তাঁর কাছে পূর্বে'র বিয়ের কথা গোপন করেন এবং ২য় বা পরবর্তী স্বামী তা জানতে পারেন তাহলে সেটি দণ্ড;বিধির ৪৯৫ ধারা অনু;সারে একটি অপরাধ। যার ভিত্তিতে অপরাধীকে সর্বোচ্চ দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করা হবে, সাথে অর্থদণ্ডও প্রযোজ্য হবে।কারো বিবাহিত স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে গেলে আইনি প্রতিকার কী?
অন্যে'র স্ত্রী জানা সত্ত্বেও কোনো বিবাহিত নারী'কে কোনো পুরু;ষ যদি ফুস;লিয়ে বা প্ররো;চনার মাধ্যমে যৌন সঙ্গম করার উদ্দেশে কোথাও নিয়ে যায় বা একই উদ্দেশে কোথাও আটকে রাখে তাহলে সেটি একটি অপরাধ যা দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারা-দণ্ডনীয়, অথবা অর্থদণ্ড কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।স্বামীর অজ্ঞাতে স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার: আইনি প্রতিকার কী?
দণ্ডবিধি'র ৪৯৭ ধারায় ব্যভিচারের শাস্তি'র উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্য-ক্তি এমন কোনো বিবাহিত নারী'র সঙ্গে তার স্বামী'র সম্মতি ছাড়া যৌন সঙ্গম করে এবং অনুরূপ যৌন সঙ্গম যদি ধর্ষণের অপরাধ না হয়, তাহলে সে ব্যক্তি ব্যভি;চারের দায়ে দায়ী হবে। যার শাস্তি সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারা-দণ্ড সহ উভয় দণ্ড। তবে ব্যভিচারের ক্ষেত্রে স্ত্রী;লোকটির কোনো শাস্তির বিধান আইনে নেই।আইনি প্রতিকার কোথায়, কীভাবে পাওয়া যাবে?
উপ-রোক্ত অপরাধে'র ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নিকট;স্থ থানা বা আদাল'তে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। থানায় ভার-প্রাপ্ত কর্ম;কর্তা বরাবর এজাহার দাখিল করা যায়, থানায় অভিযোগ গ্রহণ না করলে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ করা যাবে। পরিশেষে , বাংলাদেশে বিবাহ নিবন্ধনে'র আইনি বাধ্য-বাধকতা থাকা সত্ত্বেও অন-লাইন বা ডিজিটাল বিবাহ নিবন্ধন ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে এই সুযোগে বিয়ে সংক্রান্ত প্রতা;রণার আশ্রয় নিয়ে থাকেন যা বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যে'কোনো বিয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে, বিয়ের নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে, বিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-বিধান সম্বন্ধে স-জাগ থাকতে হবে। ধর্মীয়, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ ধারণ করতে হবে এবং বিয়ে সংক্রান্ত প্রতারণার শিকার হলে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। তাহলেই এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে আশা করা যায়।সুত্রঃ ইন্টারনেট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন